সারাংশ ও সারমর্ম

ক্ষীণ বন্যলতা এক অতি ক্ষুদ্রকায়, রৌদ্র বিনা হয়ে আছি বিশীর্ণ কঙ্কাল

ক্ষীণ বন্যলতা এক অতি ক্ষুদ্রকায়

বিশাল বটের তলে ভূমিতে লুটায়।

বট বলে,”ছায়ময় বাহি প্রসারিয়া

আশ্রয় দিয়েছি তোমা করুণা করিয়া,

নতুবা তাপানলে শুস্ক হতো দেহ”।

লতা বলে, “ফিরে লহ অযাচিত স্নেহ।

তোমার করুণা মম হইয়াছে কাল,

রৌদ্র বিনা হয়ে আছি বিশীর্ণ কঙ্কাল”।

সারমর্মঃ অযাচিত স্নেহ, করুণা স্নেহধন্যদের মঙ্গল বয়ে আনে না। এতে আশ্রিতাদের জীবনীশক্তি ধ্বংস হয়। সমাজে অনেক ক্ষমতাধর ও বিত্তবালনরা অসহায়দের করুণাবশে আশ্রয় দেয়;কিন্তু তাদের এ করুণা আশ্রিতাদের স্বাভাবিক বিকাশের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

 

সারমর্ম আমার একার সুখ, সুখ নহে ভাই

আমার একার সুখ, সুখ নহে ভাই,

সকলের সুখ, সখা, সুখ শুধু তাই।

আমার একার আলো সে যে অন্ধকার,

যদি না সবারে অংশ দিতে আমি পাই।

সকলের সাথে বন্ধু, সকলের সাথে,

যাইব কাহারে বল, ফেলিয় পশ্চাতে।

ভাইটি তোমার সে যে ভাইটি আমার,

নিয়ে যদি নাহি পারি হতে অগ্রসর

সে আমার দূর্বলতা, শক্তি সে তো নয়।

সবাই আপন হেথা, কে আমার পর,

হৃদয়ের যোগ সে কি কভু ছিন্ন হয়?

এক সাথে বাঁচি আর এক সাথে মরি,

এসো বন্ধু, এ-জীবন সুমধুর করি।

সারমর্মঃ শুধু নিজের একার সুখ মূলত কোনো সুখ নেই। ভাই -বন্ধু, আপন-পর সবাইকে নিয়ে সুখী হওয়াই প্রকৃত সুখ। অন্যর সুখে সুখী হওয়া, অন্যের দুঃখে দুঃখী হওয়া এবং এক সাথে বাঁচা মরার মধ্যেই জীবনের পরিপূর্ণতা আসে, জীবন হয় মধুময়।

 

 

সারমর্ম সার্থক জন্ম মোর জন্মেছি এই দেশে

সার্থক জন্ম মোর জন্মেছি এই দেশে,

সার্থক জন্ম মাগো তোমায় ভালোবেসে।

জানিনে তোর ধন রতন আছে কি না রানির মতন,

শুধু জানি আমার অঙ্গ জুড়ায় তোমার ছায়ায় এসে।

কোন বনেতে জানিনে ফুল, গন্ধ এমন করে আকুল,

কোন গগনে উঠরে চাঁদ এমন হাসি হেসে।

আঁখি মেলে তোমার আলে প্রথম আমার চোখ জুড়ালো।

ঐ আলোতে নয়ন রেখে মুদবো নয়ন শেষে।

সারমর্মঃ জন্মভূমি সকলের কাছেই প্রিয় ও পবিত্র।স্বদেশের প্রতি প্রত্যেকেরই মমতা আছে।ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ না থাকলেও স্বদেশ অত্যন্ত আদরের। মাতৃভূমিতে মৃত্যুবরণ প্রতিটি মানুষেরই কাম্য।

সারমর্ম বিপদে মোরে রক্ষা করো এ নহে মোর প্রর্থনা

বিপদে মোরে রক্ষা করো, এ নহে মোর প্রর্থনা

বিপদে আমি না যেন করি ভয়।

দুঃখ তাপে ব্যথিত চিত্তে নাই- বা দিলে সান্ত্বনা,

দুঃখ যেন করিতে পারি জয়।

সহায় মোর না যদি জুটে, নিজের বল না যেন টুটে,

সংসারেতে ঘটিলে ক্ষতি,লভিলে শুধু বঞ্চনা।

নিজের মনে না যেন মানি ক্ষয়।

 

সারমর্মঃ স্রষ্টার নিকট কখনও অনুগ্রহ কামনা করা উচিত না। স্রষ্টা মানুষকে বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করবেন। দঃখে সান্তনা দেবে এটাও প্রার্থনা করাল উচিত নয়। বরং স্রষ্টার প্রতি পূর্ণ আস্থা রেখে দৃঢ় মনোবল নিয় সমস্ত প্রতিকূলতা মোকাবেলা করার মানসিকতা,দৃঢ়তা ও আত্মশক্তি সকলের থাকা চাই।

সারমর্ম হউক সে মহাজ্ঞানী মহা ধনবান অসীম ক্ষমতা তার অতল সম্মান

হউক সে মহাজ্ঞানী, মহা ধনবান,

অসীম ক্ষমতা তার অতল সম্মান।

হউক বিভব তার সম সিন্ধু জল,

হউক প্রতিভা তার অক্ষুণ্ণ উজ্জ্বল।

হউক তার বাস রম্য হম্য মাঝে,

থাকুক সে মণিময় মহামূল্য সাজে।

কিন্তু সে সাধেনি কভু জন্মভূমি হিত,

স্বজাতির সেবা করেনি কিঞ্চৎ,

জানাও সে নারাধমে জানাও সত্বর

অতীব ঘৃণিত সে পাষন্ড বর্বর।

সারমর্মঃ মানুষ মহাজ্ঞান, বিপুল ধন-সম্পদ ও শক্তির অধিকারী হতে পারে;কিন্তু জাতির সেবায় সে নিজেকে নিয়োজিত না করে, তবে সে নরাধম ও বর্বর বলে বিবেচিত হয়। নিজ জাতির কল্যাণের মধ্যেই সকল প্রতিভার সাফল্য নিহিত থাকে।

সারমর্ম তরুতলে বসে পান্থ শ্রান্তি করে দূর

তরুতলে বসে পান্থ শ্রান্তি করে দূর,

ফল আস্বাদনে পায় আনন্দ প্রচুর।

বিদায়ের কালে হাতে ডাল ভেঙ্গে লয়,

তরু তবু অকাতর, কিছু নাহি কয়।

দুর্লব মানব জন্ম পেয়েছে যখন,

তরুর আদর্শ কর জীবনে গ্রহন।

পরার্থে আপন সুখ দিয়ে বিসর্জন,

তুমিও হওগো ধন্য তরুর মতন।

 

সারমর্মঃ অপরের কল্যাণে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিলিয়ে দেয়ার মাঝে মানব জীবনের প্রকৃত সার্থকতা।মহৎ হৃদয়ের অধিকারীরা অন্যর জন্য জীবনের সর্বস্ব বিলিয়ে দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না।দুর্লভ মানব জন্ম তাদের সার্থক হয় পরহিত ব্রতে নিজেকে উৎসর্গের মধ্য দিয়ে। যেমনি গাছ করে থাকে। মানুষেরও উচিত গাছের আদর্শ অনুসরণ করে পরার্থে নিজিকে বিলিয়ে দেয়া।

সারমর্ম বহুদিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে বহু ব্যয় করি

বহুদিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে

বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘরে

দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা,

দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া

ঘর হইতে শুধু দুই পা ফেলিয়া

একটি ধানের শীষের উপর

একটি শিশির বিন্দু।

সারমর্মঃ মানুষ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য বহু সময় ও অর্থ ব্যয় বহু দেশ ঘুরে বেড়ায়। অথচ তার চারপাশের অনির্বচনীয় সৌন্দর্যটুকু সে প্রত্যক্ষ করে না। আমাদের পাশে সৌন্দর্যের বিচিত্র সমারোহ থাকতে পরিশ্রম করে দূরে গিয়ে সময় ও অর্থ নষ্ট করার কোনো যুক্তি নেই।

দন্ডিতের সাথে দন্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে, মহা অপরাধী হবে তুমি তার কাছে | সারমর্ম

দন্ডিতের সাথে

দন্ডদাতা কাঁদে যবে সমান আঘাতে

সর্বশ্রেষ্ঠ সে বিচার।যার তরে প্রাণ

ব্যথা নাহি পায় কোনো, তারে দন্ড দান

প্রবলের অত্যাচার। যে দন্ড বেদনা

পুত্রের পার না দিতে, সে কারেও দিও না।

যে তোমার পুত্র নহে, তারও পিতা আছে,

মহা অপরাধী হবে তুমি তার কাছে।

 

সারমর্মঃ অপরাধপ্রবণতা মানুষের জন্মগত প্রবৃত্তি নয়। তাই কোনো অপরাধীকে শাস্তি দেওয়ার পূর্বে বিচারককে আন্তরিক ও সহমর্মী হওয়া উচিত। যে বিচারক দন্ড দিতে গিয়ে অপরাধীর প্রতি সহানুভূতিশীল হন এবং নিজেকে দন্ডিত ব্যক্তির আপনজন ভেবে ব্যথিত হন তাঁর বিচারই হবে সর্বশ্রেষ্ঠ বিচার।

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র সারমর্ম

বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র।

নানানভাবে নতুন জিনিস শিখছি দিলবা রাত্র।

এই পৃথিবীর বিরাট খাতায়

পাঠ্য যেসব পাতায় পাতায়।

শিখছি সেসব কৌতূহলে নেই দ্বিধা লেশ মাত্র।

সারমর্মঃ বিশ্বের বিচিত্র বৈশিষ্ট্য থেকে মানুষ শিক্ষা লাভ করে। নিত্য নতুন প্রকৃতি থেকে অর্জিত হয় মানুষের অভিঙ্গতা, বিশ্বের বুকে লুকিয়ে থাকা বিচিত্র রহস্য মানুষের ঙ্গানের উৎস। সে শিক্ষা, অভিঙ্গতা,ঙ্গানকে কাজে লাগিয়ে জীবনকে সমৃদ্ধ করা উচিত।

স্বাধীনতা স্পর্শ মণি সবাই ভালোবাসে ,বুক ফুলিয়ে দাঁড়ায় ভীরু স্বাধীনতার বলে | সারমর্ম

স্বাধীনতা স্পর্শ মণি সবাই ভালোবাসে,

সুখের আলো জ্বলে বুকে দুঃখের ছায়া নাশে।

স্বাধীণতা সোনার কাঠি খোদার সুধা দান,

স্পর্শে তাহার নেচে উঠে শূন্য দেহে প্রাণ।

মনুষ্যত্বের বান ডেকে যায় যাহার হৃদয় তলে,

বুক ফুলিয়ে দাঁড়ায় ভীরু স্বাধীনতার বলে।

সারমর্মঃ স্বাধীনতা বিধাতার মহান দান।পরশমণির মতোই এটি মূল্যবান। এর পরশে মানব প্রাণ চাঞ্চল্য দেখা দেয়, ভীরু বুক ফুলিয়ে দাঁড়ায়। স্বাধীনতা পদাহতকে শিক্ষা দেয় উচু হয়ে দাঁড়াতে, শক্তিহীনকে সে দেয় বীরের মহিমা।